Dhruba Satya | Pen 015
ধ্রুবসত্য'র সারসত্য ...
সেদিন বাজার যাব বলে গলির মুখে দাঁড়িয়ে আছি - রিক্সা পাচ্ছি না। পাশে অনেকগুলো পাড়ার ছেলের জটলা। নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত স্বরে কথা বলছে। সব গলির মুখেই যেমন হয় আর কি। খুব উত্তেজনা দেখে সবার অগোচরে কান পাতলাম। শুনতে পেলাম ভোলা বলছে - জানিস, এ পাড়ার হাতা ও পাড়ার খুন্তিকে পরশুদিন বিয়ে করে ফেলেছে। প্যাংলা চিৎকার করে ওঠে - তাই আবার হয় নাকি, খুন্তি হাতার চেয়ে অন্ততঃ পাঁচ বছরের বড়, তুই ভুলভাল বকছিস, আগে ভাল করে খোঁজ নে তারপর বলবি। ভোলা দমবার পাত্র নয়। সে আরও গলা চড়িয়ে বলে - সত্যি মাইরি, মায়ের দিব্যি বলছি - একদম ধ্রুবসত্যি।
ধ্রুবসত্যি বা ধ্রুবসত্য। এই শব্দটা আমরা জন্ম থেকেই শুনে আসছি। যখন কোনও কথাকে আমরা নিতান্ত সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করি তখন আমরা জোর দিয়ে বলি - এটা হল ধ্রুবসত্য। এর পেছনে মনস্তাত্তিক ভাবে একটা মহাজাগতিক বিষয় জ্ঞাত বা অজ্ঞাতভাবে ক্রিয়া করে। সেটা কি বিষয় ?
বিষয়টা হল আমাদের মহাজাগতিক পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুকে কাল্পনিকভাবে যোগ করলে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে বলে পৃথিবীর অক্ষরেখা। এই কাল্পনিক অক্ষরেখাকে কাল্পনিক ভাবে উত্তর দিকে বর্ধিত করলে তা গিয়ে উত্তর আকাশের একটি বিশেষ তারাকে স্পর্শ করে। এই বিশেষ তারাটির নাম ধ্রুবতারা। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ এটা লক্ষ্য করেছে। মানুষ এটাও দেখেছে যে এই পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে গেলেও - এমনকি আকাশের অন্যান্য সব তারা বা তারাপুঞ্জের অবস্থান সময়ের সাথে বদলে গেলেও ধ্রুবতারা উত্তর আকাশের একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবশ্যই অবস্থান করবেন - তা সে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বাদল যাই হোক না কেন। শুধুমাত্র তাঁর নির্দিষ্ট অবস্থানের গুণে বহুকাল ধরে ধ্রুবতারা আমাদের দিক নির্ণয়ের অব্যর্থ চাবিকাঠি, আমাদের যাত্রা পথের সদাসত্য বন্ধু এবং জীবনযাত্রার নিত্যসঙ্গী। এইজন্য ধ্রুব অর্থে আমরা বুঝি স্থির। ধ্রুব অর্থে বুঝি সত্য এবং শাশ্বত।
এই পর্যন্ত্য সব ঠিক আছে। কিন্তু এর পরেও কিছু প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন হল - কে এই ধ্রুবতারা ? কি তাঁর পরিচয় ? সত্যিই কি তিনি অনন্তকাল ধরে আমাদের পৃথিবীর উত্তর আকাশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির ভাবে বিরাজমান ? সত্যিই কি ধ্রুবতারা এক এবং অদ্বিতীয় - একমেবদ্বিতীয়ম ?
এবং যদি তা না হয় তবে আসল ব্যাপারটা কি ?
আমরা এখানে এইসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদের আবার নতুন করে লাটটু খেলা শিখতে হবে। আজ্ঞে হ্যাঁ, ছোটবেলার সেই কাঠের হাত লাটটু - যার নীচের দিকে একটা লোহার পিন থাকত। সুতোয় জড়িয়ে ঘুরিয়ে দিতাম আর বনবন করে ঘুরত। এইবার একটু কষ্ট করে কল্পনা করুন আপনি সুতোয় জড়িয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছেন সেই হাত লাটটু এবং সেটা বনবন করে ঘুরছে। প্রথম দিকে পিন এর ওপর লাটটু ঘুরছে সোজা হয়ে। পরে যেই না একটু গতি কমল - একটুখানি যেন কাত হয়ে গেল সেই লাটটু। এইবার মনে মনে ভাল করে লক্ষ্য করুন লাটটুর পিনটা। দেখবেন লাটটু ঘোরার সাথে সাথে পিনটা যেন মাটির ওপর একটা বৃত্তাকার দাগ তৈরী করছে। এই বৃত্তের ব্যাস এমন কিছু নয়। সামান্য এক সেন্টিমিটার এর মত হবে। কিন্তু যতই ছোট হোক না কেন বৃত্ত একটা তৈরী হচ্ছেই। কি মনে হচ্ছে ? দেখতে পেয়েছেন তো বৃত্ত ? তাহলে আমাদের প্রথম খেলা শেষ। এবার দ্বিতীয় খেলা।
এবার আরেকবার ঘোরান লাটটু টা । তবে এবারের লাটটু কে কল্পনার রঙে একটু পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে নিন। এবার আপনি লাটটু ঘোরাবেন অন্ধকার হলঘরের মেঝেতে - একটা ড্রয়িং শীট জাতীয় মোটা কাগজের ওপর। কল্পনা করুন আপনার লাটটু র মাথায় একেবারে কেন্দ্র বিন্দুতে মানে পিন এর ঠিক উল্টো মাথায় একটা ছোট এল ই ডি টর্চ বসানো আছে যা থেকে আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে এবং পিনের ডগায় কালো কালি মাখানো আছে।
এইবার মনে মনে ঘুরিয়ে দিন লাটটু টা। দেখবেন আগের মতই লাটটু টা একটুখানি কাত হয়ে গেলে ঘোরার সাথে সাথে পিনটা যেন কাগজের ওপর কালো রঙের ছোট্ট ব্যাসের বৃত্তাকার একটা দাগ তৈরী করছে। আর ওদিকে ছাদের ওপর বৃত্তাকার ভাবে ঠিকরে পড়া আলো, যার ব্যাস অনেক বড়, একটু একটু করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে ছাদের বিভিন্ন অংশকে। এইটে আপনি মনে মনে দেখতে পেয়ে গেলে আমাদের লাটটু খেলা শেষ। এইবার আসুন - কাজের কথায় আসি।
আমাদের ধরিত্রী মাতা এই দ্যাবা পৃথিবীও ওই লাটটু র মত প্রায় সাড়ে তেইশ ডিগ্রী হেলে থাকা অবস্থায় নিজের অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে বনবন করে ঘুরে চলেছেন অবিরাম গতিতে - পশ্চিম থেকে পূবে। এই হেলে থাকা ব্যাপারটাকে বাংলায় বলে অবনতি কোণ বা অবনতি। ইংরেজিতে বলে ইনক্লিনেশন বা অবলিকুইটি। পৃথিবীর বুকে ঋতু পরিবর্তন এই অবনতির জন্যেই হয়।
ধরণী মা'র অবনতি স্থির নয় - ২২.১ ডিগ্রী থেকে ২৪.৫ ডিগ্রী পর্যন্ত্য পরিবর্তনশীল। এক চক্রে এই ২২.১ ডিগ্রী থেকে ২৪.৫ ডিগ্রী পর্যন্ত্য পরিবর্তন হতে সময় লাগে প্রায় ৪০,০০০ বছর। বর্তমানে পৃথিবীর অবনতি কোণ ২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ১২.৮ সেকেন্ড বা ২৩.৪৩৬৯ ডিগ্রী। সেটাকেই ওপরে সাড়ে তেইশ ডিগ্রী বলেছি।
এই সাড়ে তেইশ ডিগ্রী অবনতিতে নিজের অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে বিষুবরেখা বরাবর পৃথিবীর ঘূর্ণনের বেগ প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১,৬৭০ কিলোমিটার। আমাদের কলকাতা অঞ্চলের অক্ষরেখা বরাবর এই গতি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১,৫৪০ কিলোমিটার। এই গতিকে বলে আহ্নিক গতি। এই গতির জন্যেই দিন ও রাত্রি হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে মাঝ আকাশে এরোপ্লেন এর গতি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮০০ থেকে ১,২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত্য হয়ে থাকে।
বিষুবরেখায় পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০,০৭৫ কিলোমিটার। এই পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯ সেকেন্ড। এটাই হল এক দিন - যাকে আমরা সহজ কথায় বলি ২৪ ঘন্টায় এক দিন। নিজের অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ঘুরতে একই সাথে এই পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছেন সূর্যকে। একে বলে বার্ষিক গতি। মাতা পৃথিবীর বার্ষিক গতির পরিমাণ অনুভব করা খুবই কঠিন - প্রতি ঘন্টায় ১,০৭,২৮০ কিলোমিটার - মানে প্রতি সেকেন্ডে ২৯.৮ কিলোমিটার। এই বিপুল গতিতেও একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। এই পরিমাণ সময়কে বলে এক সৌরবছর। আমরা সহজ কথায় বলি ৩৬৫ দিনে এক বছর।
প্রাণেশ্বর সূর্য মহাদ্যুতিমান ও সর্বপাপনাশক কিন্তু তিনি নিজেও স্থির নন - গতিমান। তাঁর সংসারে - মানে এই সৌরবিশ্বে ৮ টি গ্রহ, ৫ টি অণুগ্রহ, ১৭৮ টি উপগ্রহ সহ আরও অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অস্থির সদস্য বিরাজমান। আমাদের ও সৌরবিশ্বের এই সকল সদস্যদের নিয়ে তিনিও ঘূর্ণায়মান। তাঁর চলার পথকে বলে সায়ন পথ এবং গতিকে বলে সায়ন গতি। সায়ন পথে সায়ন গতির বেগ প্রতি ঘন্টায় ৭,৯২,০০০ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ২২০ কিলোমিটার। কিন্তু কোথায় ঘুরছেন তিনি সেটাও একটু জেনে নেওয়া দরকার।
মহাবিশ্বের মহাকাশে অসংখ্য তারার এক বিশাল সমাবেশকে এক কথায় বলে ব্রহ্মান্ড। ইংরেজিতে বলে গ্যালাক্সি। এই মহাবিশ্বে অসংখ্য ব্রহ্মান্ড বা গ্যালাক্সি বিদ্যমান। আমরা সৌরবিশ্বের সদস্যরা যে ব্রহ্মান্ডে বাস করি তার নাম ক্ষীরোদ সমুদ্র বা ছায়াপথ, ইংরেজিতে বলে মিলকিওয়ে গ্যালাক্সি। আমরা জানি আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার। এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে বলে এক আলোকবর্ষ। হিসাবমত, এক আলোকবর্ষ মানে প্রায় সাড়ে নয় লক্ষ কোটি কিলোমিটার। এইবার ভাবুন, আমাদের এই ক্ষীরোদ সমুদ্র বা ছায়াপথ নামক ব্রহ্মান্ডের মহাজাগতিক প্রসার ন্যূনতম অংশে প্রায় ১,০০,০০০ আলোকবর্ষ এবং দীর্ঘতম অংশে প্রায় ১,৮০,০০০ আলোকবর্ষ। অন্তত দশ হাজার কোটি ছোট বড় উজ্জ্বল অনুজ্জ্বল নানা রকম তারা নক্ষত্র আছেন এই ব্রহ্মান্ডে। বিপুল এই নক্ষত্র সমাবেশে সূর্য নিতান্তই এক সাধারণ তারা। ক্ষীরোদ সমুদ্রের কেন্দ্র স্থল থেকে প্রায় ৩০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিক অনুসরণ করে প্রতি সেকেন্ডে ২২০ কিলোমিটার বেগে ঘুরে চলেছেন আমাদের দিবাকর। প্রনয়োতস্মি দিবাকরম ।
এইসব তারা, গ্রহ বা অন্যান্য আরও অনেক মহাজাগতিক বস্তুদের সহজে চেনার জন্য অথবা তাঁদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য সমগ্র মহাকাশকে ৩০ ডিগ্রী দূরত্বের ১২ টি ভাগে ভাগ করা হয়। এক একটি ভাগকে বলে রাশি। এই বারোটি রাশির নাম যথাক্রমে মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। এ ছাড়াও মহাকাশকে আরও নিখুঁত ভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য এবং নিজেদের জীবন যাত্রার সঙ্গী করার জন্য মানুষ বেছে নিয়েছে মহাকাশের অতি পরিচিত ২৭ টি বিশেষ নক্ষত্রকে। এঁদের নাম হল যথাক্রমে অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিনী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্ব ফাল্গুনী, উত্তর ফাল্গুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্ব আষাঢ়া, উত্তর আষাঢ়া, শ্রবণা, ধ্বনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্ব ভাদ্রপদ, উত্তর ভাদ্রপদ ও রেবতী। এঁরা যে আকাশে অত্যন্ত সুষমভাবে ছড়িয়ে আছেন তা নয় - তবে ধরে নেওয়া হয় যে এঁরা পরস্পরে সুষমভাবে ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট দূরে দূরে অবস্থান করছেন।
এতগুলি বিষয়ের মধ্যে আমাদের বর্তমান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আহ্নিক গতি। সসাগরা পৃথিবীর আহ্নিক গতি তাঁর অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে কিন্তু এই অক্ষরেখার উত্তর বা দক্ষিণতম বিন্দু সব সময় একই বিন্দুতে আবদ্ধ থাকে না। মহাজাগতিক বস্তুগুলির মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবের পরিবর্তনের ফলে এবং আরও অন্যান্য কারণে একটু একটু করে বৃত্তাকার পথে সরে সরে আসে - ঠিক যেমনটি ঘটেছিল লাটটুর পিন এর ক্ষেত্রে। পৃথিবীর অক্ষরেখার এই বৃত্তাকার সরণ কে বলে বিষুবদ্বয়ের বক্রীগমন। ইংরেজিতে বলে প্রিসেশন অফ ইকুইনক্স । এটি একটি মহাজাগতিক ঘটনা। এই বক্রীগমন এর কৌনিক পরিমাণ হল প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ৫০.২ সেকেন্ড। গড়ে প্রায় বলার কারণ হল এই ৫০.২ সেকেন্ডটাও প্রতি বছর এক নয় - অণু পরিমাণ হ্রাস বৃদ্ধি এখানেও হয়।
যাইহোক, প্রিসেশন অফ ইকুইনক্স এর বাৎসরিক পরিমাণ যদি ৫০.২ সেকেন্ড হয় তাহলে মহাজাগতিক মহাবৃত্তের পুরো ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরতে কত সময় লাগবে ? খুবই সহজ অংক। ৩৬০ × ৬০ × ৬০ / ৫০.২ = ২৫,৮১৬. ৭৩ বা ২৫,৮০০ বছর। অর্থাৎ এর মানে দাঁড়াল এই যে প্রিসেশন অফ ইকুইনক্স এর ফলে পৃথিবীর চরমতম অক্ষ বিন্দুদ্বয় যে কোনও একটি স্থান থেকে যাত্রা শুরু করে বৃত্তাকার পথে বক্রীগমনে একবার পরিক্রমা করে আসতে সময় নেয় ২৫,৮০০ বছর।
তার জন্য বাস্তবে কি ঘটে ? লাটটুর মাথায় বসানো টর্চের আলো যেমন করে অনেক বড় ব্যাস নিয়ে ছাদের অনেকটা জায়গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল ঠিক তেমন করে আমাদের দৃষ্টি মহাকাশের ছাদে লেপটে থাকা বিশেষ কয়েকটি তারাকে ক্রমান্বয়ে ২৫,৮০০ বছর ধরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। অর্থাৎ যদি কোনও ব্যক্তি ২৫,৮০০ বছর বা তার বেশি বেঁচে থাকেন তবে তিনি এক নয় - একাধিক তারাকে উত্তর আকাশে ধ্রুবতারা রূপে দেখতে পাবেন। সহজ কথায় বলতে গেলে ধ্রুবতারা যেন একটি বিশেষ উপাধি - রাজা, বাদশা বা সম্রাট এর মত। ২৫,৮০০ বছরের একটি চক্রে বেশ কয়েকটি তারা কয়েক হাজার (২,৫৮০ বা ৫,১৬০) বছরের জন্য ধ্রুবতারা উপাধি ধারণ করেন। তফাৎ হচ্ছে এই যে রাজা, বাদশা বা সম্রাট রা সাধারণত একবার রাজত্ব করে দ্বিতীয় বার রাজত্ব করার সুযোগ পান না। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম ২৫,৮০০ বছরে যে যে তারা চক্রাকারে ধ্রুবতারা রূপে আবির্ভূত হন পরের ২৫,৮০০ বছরেও সেই সেই তারা একই চক্রে ধ্রুবতারা রূপে আবির্ভূত হন।
সংখ্যা টংখ্যা গুলো বেশ বড়সড় বলে মোটেও যেন ভাববেন না যে এটা কোন বিরল ঘটনা। এই ঘটনা আজ পর্যন্ত্য যতবার ঘটেছে তত কাপ চা আপনি সারা জীবনে খেতে পাবেন না। পৃথিবীর বয়স ৪৫৪.৩ কোটি বছর ধরলে ২৫,৮০০ বছর ব্যাপি এই প্রিসেশন অফ ইকুইনক্স এর ঘটনা আজ পর্যন্ত্য অন্ততঃ ১,৭৬,০০০ বার ঘটেছে। এত কাপ চা আপনি সারা জীবনে খেতে পাবেন বলুন ?
এখন শেষ প্রশ্ন - কোন নক্ষত্র কতদিন ধরে ধ্রুবতারা থাকেন ? এ প্রসঙ্গে প্রথমেই আমাদের বাইবেলের শরণাপন্ন হতে হবে। বাইবেলে আছে - ঈশ্বর পুত্র প্রভু যীশুখ্রীষ্টের জন্মের সময় পূর্ব দিক থেকে তিন জন সাধুপুরুষ জেরুজালেম অভিমুখে যাত্রা করছিলেন। সেই যাত্রাকালে উত্তর আকাশে একটি নতুন তারার জন্ম হয় এবং সেই তারাটি এই সাধুপুরুষদের পথ দেখিয়ে জেরুজালেম নিয়ে যান। বাইবেলের এই বাণী থেকে এই ধারণা করা হয় যে আমাদের বর্তমান ধ্রুবতারা আজ থেকে প্রায় ২,০১৮ বছর আগে যীশুখ্রীষ্টের জন্মের সময় আবির্ভূত হন।
বর্তমানে আমরা যাঁকে ধ্রুবতারা হিসেবে দেখি তাঁর নাম শিশুমার নক্ষত্র। পন্ডিতদের হিসাব অনুযায়ী এই শিশুমার নক্ষত্রের স্থিতিকাল ৫,১৬০ বছর। অর্থাৎ শিশুমার নক্ষত্র ধ্রুবতারা হিসেবে দৃষ্টিগোচর থাকবেন আরও প্রায় ৩,১৪০ বছর। এর পরের ৫,১৬০ বছর ধরে ধ্রুবতারা হিসেবে বিরাজমান থাকবেন উজ্জ্বল নক্ষত্র শিবি। পরের ২,৫৮০ বছর ধরে ধ্রুবতারা হিসেবে থাকবেন সূর্যের থেকে প্রায় ১০,০০০ গুণ উজ্জ্বল সুবৃহৎ নক্ষত্র ছায়াগ্নি। তার পরের ৫,১৬০ বছর ধরে যিনি ধ্রুবতারার সিংহাসনে বিরাজিত থাকবেন তাঁর নাম শ্রবণা। তার পরের ২,৫৮০ বছর ধরে ধ্রুবতারার দায়িত্ব নেবেন শ্বেত নক্ষত্র অভিজিৎ। এবং শেষের ৫,১৬০ বছর ধ্রুবতারার সিংহাসন অলংকৃত করবেন একাধিক নক্ষত্রের এক বিশাল তারাপুঞ্জ প্রচেতা। এই সম্পূর্ণ চক্রের শেষে, আজ থেকে ২৩,৭৮০ বছর পরে, আমাদের বর্তমানের শিশুমার নক্ষত্রই আবার ফিরে আসবেন ধ্রুবতারা হিসেবে জগৎ কে পথ দেখাতে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র : বেলাবাসিনী গুহ, অহনা গুহ
গোপা ।। কলকাতা ২৮ ।। ১৯৬৭
ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র : বেলাবাসিনী গুহ, অহনা গুহ
গোপা ।। কলকাতা ২৮ ।। ১৯৬৭
Anek Kichu janlam.Khub bhalo laglo .Excellent .
ReplyDeleteDarun laglo sir..anek Kichu e notun kore janlam...🙏💐👍
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteKoto kichuiii ho66e...sir apnar lekha ta dekhe aj janlam... thank you sir for giving such kind of information...plz I want to know more this kind of information
ReplyDeleteসত্যি, কত কিছু সামনেই আছে, কিন্তু অজানা থেকে যায়। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteআরেকটা জিজ্ঞাসা, সত্য তাহলে ধ্রুব নন, সময়ের সাথে সেও পরিবর্তনশীল।
ওই যে বললাম, ধ্রুব একটা উপাধি। ৫,১৬০ বা ২,৫৮০ বছরের জন্য এক একটি তারা সেই উপাধি ধারণ করেন। ততদিন তিনি সত্য ধ্রুব ।
Deleteস্যার, আপনার এই লেখা
ReplyDeleteসময় এবং মহাকাশ সম্বন্ধে নতুন করে আগ্রহী করে তুলল.
আশা করি এই রকম আরো অনেক জটিল বিষয় কে আপনি এতটাই প্রাঞ্জল ভাবে আমাদের বুঝিয়ে দেবেন.
Sir darun hoeche lekha ta..
ReplyDeleteonek kichuy jante parlam.
আক্ষরিক অর্থে ,ধ্রুব সত্য বলাটা তাহলে ভুল ।।